আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলোচিত দশ
[ad_1]
আর মাত্র কটা দিন। এরপরই শেষ হয়ে যাচ্ছে একুশ শতকের দ্বিতীয় দশক। ২০১০ থেকে সর্বশেষ এক দশকে কত কিছুই না ঘটেছে ক্রীড়াবিশ্বে। কত উত্থান-পতন, কত অঘটন, কত রূপকথার গল্প লেখা হয়েছে খেলার মাঠে, ট্র্যাকে কিংবা পুলে। গত এক দশকের সেই সব আলোচিত ঘটনা নিয়েই প্রথম আলোর এই ধারাবাহিক আয়োজন। দ্বিতীয় পর্বে মোহাম্মদ সোলায়মান তুলে এনেছেন গত এক দশকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আলোচিত দশ ঘটনাকে
আমির-আসিফ-বাটের কেলেঙ্কারি
আমির-আসিফদের নো বল-কাণ্ডে পুরো ক্রিকেট বিশ্বই থমকে গিয়েছিল। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরের লর্ডস টেস্টে বাজিকরদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে ইচ্ছেকরে নো বল করেছিলেন পাকিস্তানের দুই পেসার মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমির। তাঁরা আবার নো বল করেন অধিনায়ক সালমান বাটের পরামর্শে। ব্রিটিশ পত্রিকা নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের ছদ্মবেশী সাংবাদিকের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছিলেন তাঁরা। মাজহার মজিদ নামের এক বাজিকর ওই সাংবাদিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাটদের দিয়ে নো বল করিয়ে নিয়েছিলেন। ফল, ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন কলঙ্কিত ত্রয়ী। জেলও খাটতে হয়েছিল তাঁদের।
টেন্ডুলকারের বিদায়
একটি যুগের অবসান হলো ২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর। অভিষেকের ২৪ বছর পর ওই দিনটিতেই যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেন শচীন টেন্ডুলকার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মুম্বাইয়ের ম্যাচটি ছিল ভারতীয় কিংবদন্তির ২০০তম টেস্ট। টেস্ট ইতিহাসে আর কেউ ১৭০ টেস্টও খেলেননি। এই দশকের শুরুতে ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আরেকটি ২০০ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাও টেন্ডুলকারের হাতে। গোয়ালিয়রে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক। ২০১২ সালে ঢাকায় এশিয়া কাপে আরেকটি অনন্য কীর্তি ছুঁয়েছিলেন শচীন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১৪ রানের ইনিংসটি ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ১০০তম সেঞ্চুরি। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৫০তম সেঞ্চুরিটিও এ দশকেই ছুঁয়েছেন ২০১১ বিশ্বকাপ জেতা শচীন।
তিন মোড়লের মাতব্বরি
২০১৪ সালে ক্রিকেট বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই), ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) আইসিসির আর্থিক ও প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব। আইসিসির আয়ের বড় একটা অংশই নিজেদের প্রাপ্য বলে দাবি করেছিল বোর্ড তিনটি। টেস্ট ক্রিকেটে কাঠামোও বদলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ভারতের এন শ্রীনিবাসনের নেতৃত্বাধীন তিন মোড়ল। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারত ছাড়া অন্য টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো প্রবল বিরোধিতা করে নতুন সংস্কার পরিকল্পনার। পরে ২০১৭ সালে আইসিসির সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে তিন মোড়লের আর্থিক-নীতি সংশোধন করেন আরেক ভারতীয় শশাঙ্ক মনোহর।
রোহিত ‘ডাবল’ শর্মা
এই দশকটা যখন শুরু হলো, ছেলেদের ওয়ানডে ক্রিকেটে কারও ডাবল সেঞ্চুরি ছিল না। সেই দশকটা শেষ হচ্ছে আটটি ওয়ানডে ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে। সংখ্যাটি যে এত বড় হয়ে গেল তাতে বড় অবদান রোহিত গুরুনাথ শর্মার। ভারতীয় ওপেনার একাই যে করেছেন তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি। ২০১৩ সালে ২ নভেম্বর বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০৯ রান দিয়ে শুরু রোহিতের ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ শিকার। এক বছর ১১ দিন পর সেই রোহিত কলকাতার ইডেন গার্ডেনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করলেন বিশ্ব রেকর্ড ২৬৪ রান। ওই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সবাই মিলেও রোহিতের চেয়ে ১৩ রান কম করেছিলেন। তিন বছর পর মোহালিতে সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরিটিও পেয়ে যান রোহিত।
ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বদল যাওয়া
আগের সব বিশ্বকাপের মতো ২০১৫ সালেও একরাশ হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরেছিল ইংল্যান্ড। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের কাছে হারটি তো প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিশ্চিত করে দিয়েছিল ইংলিশদের। লজ্জায় অধোবদন ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এরপর নতুন পরিকল্পনা সাজায় ৫০ ওভারের ক্রিকেটে জন্য। মান্ধাতা আমলের ক্রিকেট ছেড়ে ‘পাওয়ার’ ক্রিকেটের মন দেয় দলটি। ফল, ওয়ানডেতে ‘৩৫০’ করাটাকেই ডালভাত বানিয়ে ফেলে দলটি। একঝাঁক বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান ও কার্যকরী অলরাউন্ডার নিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটটাকে নিজেদের বানিয়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড। চার বছরের পরিকল্পনার ফসল হিসেবে এ বছর প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে এউইন মরগানের দল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মূল ম্যাচ ও সুপার ওভারে দুবার টাই হওয়া ফাইনালটা অবশ্য অদ্ভুত নিয়মের কারণেই জিতেছে ইংল্যান্ড।
দিবারাত্রির টেস্ট
টি-টোয়েন্টির এই যুগে টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচাতে কত নতুন পরিকল্পনাই না নিতে হচ্ছে। দর্শক যেন মাঠে আসে তা নিশ্চিত করতেই দিবারাত্রির টেস্টের আবির্ভাব। ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে ইতিহাসের প্রথম দিবারাত্রির টেস্টে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। এরপর গত চার বছরে আরও ১৩টি দিবারাত্রির টেস্ট দেখেছে ক্রিকেট। গত মাসে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে বাংলাদেশও খেলে ফেলেছে দিবারাত্রির গোলাপি বলের টেস্ট। ম্যাচে অবশ্য আড়াই দিনও টিকতে পারেনি বাংলাদেশ। দিবারাত্রির টেস্টে মূল সমস্যাও ধরা হচ্ছে ওই গোলাপি বলকে। তবে সব সমস্যাকেই থোড়াই কেয়ার করে তরতরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। এ পর্যন্ত সাতটি দিবারাত্রির টেস্ট খেলে সাতটিতেই জিতেছে দলটি।
বল টেম্পারিং-কাণ্ড
২০১৮ সালে মার্চে কেপটাউন টেস্ট বল টেম্পারিং করতে গিয়ে টেলিভিশন ক্যামেরায় হাতেনাতে ধরা পড়েন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ক্যামেরন ব্যানক্রফট। বলের এক পাশ খসখসে রাখতে শিরীষ কাগজ ঘষছিলেন ব্যানক্রফট। অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ ও সহ অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারও জড়িত ছিলেন এই কাণ্ডে। লজ্জায় অধোবদন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) ব্যবস্থা নিতে সময় নেয়নি। এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় স্মিথ-ওয়ার্নারকে, ব্যানক্রফট নিষিদ্ধ হন ছয় মাসের জন্য। কিছুদিন পর পদত্যাগ করেন দলটি কোচ ড্যারেন লেম্যানও। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটটাই যেন বদলে গেছে তাতে। ক্রিকেটারদের জন্য নতুন আচরণবিধিও প্রণয়ন করেছে সিএ।
কনকাশন বদলি
২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া শেফিল্ড শিল্ডে মাথায় বল লেগে মাঠেই অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন ফিলিপ হিউজ। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানের চেতনা আর ফেরেনি, হাসপাতালে মারা যান তিনি। ওই ঘটনার পরে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তায় কনকাশন (মাথায় আঘাতজনিত জটিলতা) বদলি চালু করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। পরে সিএর অনুকরণে অন্যান্য বোর্ডগুলোও নিয়মটা চালু করে। সবশেষে এ বছর আইসিসি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও কনকাশন বদলির নিয়ম চালু করে। কোনো খেলোয়াড়ের কনকাশন হলে ওই খেলোয়াড়ের ‘লাইক টু লাইক’ (একই ধরনের) বদলি করতে পারবে দলগুলো। সর্বশেষ অ্যাশেজে থেকে চালু হয়েছে নিয়মটি।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ
অনেক প্রতীক্ষার পর অবশেষে দশক শেষ হওয়ার আগেই চালু হলো বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা—টেস্ট ক্রিকেটে শীর্ষ নয়টি দল অংশ নিচ্ছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে। সব দল অবশ্য সব দলের বিপক্ষে খেলবে না। প্রতিটি দল ঘরের মাঠে তিনটি ও প্রতিপক্ষের মাঠে তিনটি, মোট ছয়টি সিরিজ খেলবে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্র শেষে ২০২১ সালে লর্ডসে ফাইনাল খেলবে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুটি দল। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ উপলক্ষেই প্রথমবারের মতো টেস্ট জার্সিতে নম্বর লেখা চালু করেছে আইসিসি।
বাংলাদেশের উত্থান
এ দশকের শুরুতেও বাংলাদেশকে কে পাত্তা দিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। সেই দলটিই বদলে গেল দশকের মাঝামাঝিতে এসে। বিশেষ করে ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে এখন সমীহ করে খেলে না এমন দল খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মাশরাফির নেতৃত্ব, সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, মুশফিক-তামিমের ব্যাটিং, মোস্তাফিজের বোলিং এবং আরও অনেকের ঝিলিক বাংলাদেশকে ক্রিকেট বিশ্বে একটি শক্তি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছে। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলা সেটিরও প্রতিফলন। ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা দুটি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। টেস্টেও খারাপ যায়নি দশকটি। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়া দুটি জয়ে সেটির প্রমাণ।
[ad_2]
Source from @ www.prothomalo.com